প্রত্যয় নিউজডেস্ক: নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৫৩ সালে পদ্মার তীর ঘেষে সবুজ মতিহারের বুকে ৭৫৩ একর জমির উপর গড়ে উঠে প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত বাংলাদেশের অন্যতম শিক্ষাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহী বিভাগে বনভূমি কম থাকলে ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সবুজে ঘেরা।বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিখ্যাত ভাষ্করদের নকশায় নির্মিত অপরূপ সব স্থাপত্য , রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফুল , হরেক রকম পাখি ,নানান প্রজাতির গাছ আর বিচিত্র প্রাণীর সমারোহ। বিশ্বিবদ্যালয়ের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রতিদিনই ছুটে আসতো অসংখ্য মানুষ।
কিন্তু কভিড ১৯ এর ফলে দীর্ঘ পাঁচ মাস বন্ধ এই প্রাণ প্রিয় ক্যাম্পাস। ১৭মার্চ থেকে বাংলাদেশের প্রায় সকল ক্যাম্পাসই বন্ধ। ঘরে বন্দী হওয়া প্রায় পাঁচ মাসের বেশি , স্থানীয় হওয়ায় মাঝে মধ্যে ছুটে যায় ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রাণ , সর্বক্ষণ মনে হয় কেমন আছে প্রাণহীন ক্যাম্পাস ? সব স্মৃতি যেন ক্যাম্পাসের সাথে জড়িত। কেননা, ক্যাম্পাসে ঢুকতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্রিয় বন্ধুদের চেহারা , তাদের সাথে ক্লাস করা , আড্ডা , ঘুরে বেড়ানো। এছাড়াও শিক্ষকদের স্নেহ , বড় ভাই – আপুদের অবিরাম ভালোবাসা। টুকিটাকির টংয়ের দোকানে চায়ের কাপে খোশগল্প , গান , আড্ডার ব্যস্ততা । লাইব্রেরীর পিছনে এনামুল ভাইয়ের দোকানে রাজনীতি , দর্শন , অর্থনীতি সহ বিভিন্ন সম সাময়িক বিষয়ে আলোচনায় ডুবে থাকা। চিরচেনা ইবলিশের পুকুরপাড়ের বেদীতে বন্ধুদের জন্মদিন পালন , প্যারিস রোডে ভাইভা বা প্রেজেন্টেশন শেষে ফটোশুট , শেষ বিকেলের সূর্য ডুবার আগে প্যারিস রোডে কাপলদের শাড়ি , পাঞ্জাবি পরে হেঁটে বেড়ানোর দৃশ্য , বধ্যভূমির পুকুর পাড়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাপলদের আনাগোনা । শহীদ মিনারে ব্যস্ততায় ঘেরা বন্ধু , বড় ভাই – আপুদের সাথে গল্পে কিংবা জেলা সমিতি বা সামাজিক সংগঠনের মিটিং।নীল সাদা বাসে সিট না পেয়ে ঝুলতে ঝুলতে জিরো পয়েন্ট যাওয়া , ক্লাসে বন্ধুর পাশে জায়গা রাখতে বলা , ফটোকপির দোকানে ভিড় জমানো , খেলার মাঠে নিজ ডিপার্টমেন্টের হয়ে গলা ভাঙা চিল্লানো। বুদ্ধিজীবী , সিরাজী কিংবা ইবলিশের মাঠে বসে গোল হয়ে আড্ডা জমানো। শহীদ সোহরাওয়ার্দী কিংবা লতিফ হলে হুটহাট পরিকল্পনা ছাড়াই বন্ধুদের নিয়ে রান্না চাপানো। খাওয়া শেষ করে দলবেঁধে পশ্চিমপাড়া হয়ে গান বলতে বলতে চারুকলায় যাওয়া। আর ও কত কী! দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় সবার অবস্থান নিজ নিজ বাড়িতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা হলেও থেকে যায় মনে আবেগের ঘনঘটা। চিরচেনা ক্যাম্পাস আজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর হয়ে যৌবনের শ্রেষ্ঠ সময় পার করছে। কারণ গাছে গাছে সবুজ পাতা , নানান রকম ফুল , পাখি আর লাল সাদা বিল্ডিং ঘেষে বেয়ে ওঠেছে হাজারো লতাপাতা। কিন্তু নেই কোন আলোকসজ্জায় ঘেরা বর্ণিল রুপসজ্জা , কোন দিবস বা বিভাগ এর আয়োজনে সৃষ্টি হয় না আর্টসেল , আভাস কিংবা শিরোনামহীন এর ড্রামের শব্দে হৃদয়ের কম্পন। শিক্ষার্থীদের পদচারনার অভাবে ক্যাম্পাস আজ প্রাণহীন। ক্যাম্পাসকেন্দ্রীক কর্মমুখী ঝালমুড়িওয়ালা , বাদাম বিক্রেতা কিংবা পেয়ারা বিক্রেতার মত মানুষদের নেই আনাগোনা। করোনা ভাইরাস বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকল সদস্যদের করেছে গৃহবন্দী। সৃষ্টি কর্তার কাছে চাওয়া একটাই করোনার মহামারী কাটিয়ে পৃথিবীর বুকে নতুন এক সূর্য
উদয়ের দৃশ্য যেন আমরা সকলেই দেখতে পাই।
মোঃ আরিফুল ইসলাম
ডিপার্টমেন্ট, ইনফরমেশন সাইন্স এন্ড লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট , প্রতিভাস ২৭ ব্যাচ , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।